শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২১ ১৪৩১
|| ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
আব্দুল লতিফ মিঞা, বাঘা
প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০১৯
নগরায়ন আর সচেতনতার অভাবে আজ বিলুপ্তির পথে দেশের পাখ-পাখালি। সারস-জাতীয় শামুকখোল পাখি এর একটি। র্দুলভ প্রজাতির এই শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিভৃত গ্রাম ‘খোর্দ্দ বাউসা’। গ্রামের বড় বড় গাছগুলোয় হাজারো পাখির বসবাস। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ, আনন্দঘন পরিবেশকে করে তুলে আরো প্রাণবন্ত। এমনকি বদলে গেছে গ্রামটির নামও।
নতুন করে পরিচিতি পেয়েছে পাখির গ্রাম হিসেবে। পাখির অদ্ভুত মিতালী দেখতে আসেন দুরদুরান্তের দর্শনার্থীরা। এই পাখিগুলো সংরক্ষণে গ্রামবাসীদেরও আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। অপার মমত্বে আগলে রেখেছেন এই পাখিগুলোকে। গ্রামবাসীর স্বপ্ন, একদিন পাখিদের এই গ্রামের পরিচয় ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। বেঁচে থাকবে মানুষ, গাছ ও পাখির এই মিতালী।
গ্রামের মানুষের ভালবাসা আর নিরাপত্তা পেয়ে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে দিনদিন বাড়ছে এই পাখির সংখ্যা। প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে গাছে বাসা বেঁধেছে হাজারো শামুকখোল পাখি। গ্রামবাসিরা বলেন,এদেশে এই পাখি প্রজননে অতীত কোন ইতিহাস না থাকলেও খোর্দ্দ বাউসা গ্রামটি খাল-বিলের পাশে হওয়ায় এখানে প্রজনন সম্ভব হচ্ছে। তবে শীতের সময় উপদ্রক মনে না হলেও গ্রীষ্মকালে অনেকেই উপদ্রক মনে করছেন।
স্থানীয়রা জানান, তারা পাখিদের আসা যাওয়া বেশ উপভোগ করেন। আর তাই এসব পাখিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেরাই করে থাকেন। তাদের প্রত্যাশা এই পাখি রক্ষায় সরকারও এগিয়ে আসবে। তাই নিরাপত্তার পাশাপাশি পাখির এই আবাসস্থলকে সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করার আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসি। প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সচেতনতা সৃষ্টিতেও উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষক শাহাদত আর খোর্দ্দ বাউসা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখি সংরক্ষনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বাগান মালিক কাউকে ধরতেও দেইনা। পাখিরা চলে না যায়,সেজন্য মৌসুমে সেইসব গাছের আম শর্ত সাপেক্ষে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করেণ। ক্রেতারা সেই শর্তে মেনে,পাখিরা যখন খাবার সংগ্রহে যায় তখন গাছের আম নামিয়ে নেন। প্রথম দিকে বৈশাখের শুরু থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত বিচরণ থাকতো এইসব পাখির। তবে এখন প্রায় সারা বছরই থাকে। তারা পাখি সংরক্ষনের দায়িত্ব পালন করেন।
বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম মুকুট বলেন, র্দুলভ পাখিগুলো অনেকদিন ধরে আমার আম বাগানসহ বিভিন্ন গাছে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তাদের আসার পর থেকেই আমি সংরক্ষণের চেষ্টা করে আসছি। এজন্য গ্রামবাসীকেও উৎসাহিত করেছি। তার ভাষায়,আগে অঞ্চলভেদে বড় বড় বট পাইকড় গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসবাস করতো। এসব গাছের ফল খেয়ে জীবন ধারন করতো। কালের বির্বতনে হাট-বাজার কিংবা গ্রামের ফাঁকা জায়গায় বট-পাইকড় গাছ না থাকায় আবাসস্থল হিসেবে আমগাছসহ বিভিন্ন গাছকে বেছে নিয়েছে।
গ্রামের নিহারা খাতুন জানান, পাখিগুলোর হাক-ডাকেই এখন আমাদের ঘুম ভাংগে। পাখিগুলো দেখতে দুরদুরান্তের দর্শনার্থীরা আসায় আমরা গর্ব অনুভব করি। গ্রামের মোহন জানান, তার বাঁশঝাড়ের দেশীীয় পাখীগুলো নিজেই সংরক্ষন করছেন। হাওরের খাল-বিল ও কৃষি জমিতে খাবার খুঁজতে গিয়ে অনেক পাখি মারাও যায়। আড়ানি ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক রফিকুল ইসলাম বলেন,সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবেও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞা বলেন,‘খোর্দ্দ বাউসায় যে শামুকখোল পাখিগুলো দেখা যাচ্ছে তার সংখ্যা মোটামুটি ভাল। এটি হওয়ার প্রধান কারনটি হচ্ছে সচেতনতা। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে যারা পাখি সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছে, নিঃসন্দেহে তারা প্রশংসা পাবার যোগ্য। ওই কলেজের আরেক প্রভাষক বেলাল উদ্দীন বলেন, এটা যদি আমরা আরো শক্তভাবে ধরে রাখতে পারি তাহলে যে পাখিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সে পাখিগুলো আমরা সংখ্যায় আরো বেশি দেখতে পাব।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিন রেজা বলেন, ‘পাখিগুলো যাতে তাদের বংশবিস্তার যথাযথভাবে করতে পারে এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবো। সেইসাথে গনমাধ্যম কর্মীকে ধন্যবাদ জানাই এই বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য।’ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, এদের রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিবেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, ওই গ্রামে শামুকখোল, ফিঙ্গে, বাদুড়, শালিক,দোয়েল, মাইছা বক, পানকৌড়ি, সলি ও সারসসহ দেশী পাখির সংখাই বেশী। এই পাখি সংরক্ষণে সরকারিভাবে প্রজেক্ট হিসেবে উদ্যোগ নেয়া হবে। সাদা বর্ণের শামুকখোল পাখির পিঠ ও ডানার অংশ কালো। অদ্ভুত ঠোঁটের জন্য খুব সহজে অন্যান্য পাখি থেকে একে আলাদা করা যায়। এরা শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারণ করে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়